মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র মাণদণ্ড হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি।
by Syed Mucksit
Religion
Published: a year ago
|Updated: a year ago
লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছি। মনটা আজ বড্ড খারাপ। ওহ! দরজাটাও ভুল করে লাগিয়ে দিয়েছি। স্বামী বেচারা বাসায় ফিরে খামাকা টেনশন করবেন। কাঁথা সরিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে পুনরায় শুয়ে আছি দু'টো চোখ বুজে।
মন খারাপ?
স্বামীর আগমন। প্রশ্নটা উনিই করেছেন। কিন্তু আমি জবাব দিতে ইচ্ছুক নই। কেননা মন খারাপের কারণ বললেই মন ভালো হবার ঔষধ খাইয়ে দিবেন। তা-ই আর বলিনি। উনি হয়তো টের পেয়েছেন। নয়তো কি লাইট অন করে চলে যাবার কথা। স্বামী-স্ত্রীর মহব্বত হয়তো এখানেই। একটু জালাতন না করলে কি হবে। উনি ভালো করে জানেন যে আমি আলোতে ঘুমোতে পারিনা। অবশ্য অন্য সময় আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়ি। তবে এখন ঘুমাচ্ছিনা। উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে। তাই কান খাড়া করে মা ছেলের কথোপকথন শুনছি।
1
Task
লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছি। মনটা আজ বড্ড খারাপ। ওহ! দরজাটাও ভুল করে লাগিয়ে দিয়েছি। স্বামী বেচারা বাসায় ফিরে খামাকা টেনশন করবেন। কাঁথা সরিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে পুনরায় শুয়ে আছি দু'টো চোখ বুজে।
মন খারাপ?
স্বামীর আগমন। প্রশ্নটা উনিই করেছেন। কিন্তু আমি জবাব দিতে ইচ্ছুক নই। কেননা মন খারাপের কারণ বললেই মন ভালো হবার ঔষধ খাইয়ে দিবেন। তা-ই আর বলিনি। উনি হয়তো টের পেয়েছেন। নয়তো কি লাইট অন করে চলে যাবার কথা। স্বামী-স্ত্রীর মহব্বত হয়তো এখানেই। একটু জালাতন না করলে কি হবে। উনি ভালো করে জানেন যে আমি আলোতে ঘুমোতে পারিনা। অবশ্য অন্য সময় আমি কাঁথা মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে ঘুমিয়ে পড়ি। তবে এখন ঘুমাচ্ছিনা। উদ্দেশ্য তো অবশ্যই আছে। তাই কান খাড়া করে মা ছেলের কথোপকথন শুনছি।
আয়েশার কি হয়েছে আম্মু?
কি আর হবে। পাশের বাসার ভাবি খোঁটা দিয়েছেন।
ওহ! তাতে কি হয়েছে। আপনিও দেখছি চুপচাপ।
তো কি করবো বাবা! ভাবির কথা শুনে আমারও যে মন খারাপ হয়ে গেছে।
ওহ! আমার আম্মুর মন খারাপ হয়ে গেছে? এক্ষুণি মন ভালো করে দিচ্ছি (ইন শা আল্লাহ)। তবে একটা শর্ত আছে?
মাথায় বিলি কেটে দিবেন।
আচ্ছা বাবা দিব। তার আগে আয়েশাকেও জাগিয়ে তোলে আনি।
উনি তো ঘুমিয়ে আছেন।
ঘুমিয়ে আছে? না খেয়ে ঘুমালে হবে। আমি জাগিয়ে তোলে আনি।
মা ছেলের কথোপকথন শুনে কি আর ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা সম্ভব। জলদি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। চট জলদি মাথায় কাপড় দিয়ে জুতো জোড়া পড়ছিলাম তখনই শ্বাশুড়ি মা ডাকতে ডাকতে রুমে আসলেন। রুমের লাইট জ্বালানো দেখে তিনি অবাক হয়ে আশ পাশ তাকিয়ে আমার পানে তাকালেন। আমি একরাশ হতাশা দেখানোর ভান করতেই তিনি বলে উঠলেন,
পাঁজি টা লাইট জ্বালিয়ে দিয়েছে নিশ্চয়ই। আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে সায় দিলাম। উনি হাসলেন। সাথে আমিও হাসলাম। উনি ইশারা দিয়ে আসতে বললেন। আমি চুপচাপ উনার পিছু নিলাম। আমার স্বামী পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে আছেন। অন্য সময় হলে নিশ্চিত বকা খেতেন। তবে আজকে আর বকা খেতে হয়নি। গরম গরম চা তৈরি করবার আদেশ আসলো। তিন কাপ চা তৈরি করলাম। উনার হাতে চা দিতেই মনোযোগ দিয়ে খেতে লাগলেন। মা চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন,
হুমম। বল কি বলবি।
কিন্তু আমার স্বামী শুরু করার আগেই চা পুরোপুরি শেষ করে ফেলেছেন। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে মা'কে বললেন,
আমার কাপে চা কম হয়েছে।
মা রাগ দেখিয়ে আদরের ছেলেকে অর্ধেক কাপ দিয়ে দিলেন। কিন্তু বেচারা সন্তুষ্ট নয়। আমার কাপ থেকে অর্ধেক দিয়ে পূর্ণ করতে হবে। মোট কথা জালাতন না করলে চা হজম হবে না।
চোখ বুজে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন, কেউ খোঁটা দিলে মন খারাপের কিছু নেই আম্মু। ইসলামের প্রাথমিক যুগেও কিছু লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খোঁটা দিতো। তারা এই বলে খোঁটা দিতো, "আমরা ছিলাম বলে আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনাকে সহযোগিতা করেছি।"
অথচ পবিত্র কুরআনে এ ধরনের মানুষকে উদ্দেশ্য করে বলেছে, তোমরা এ কেমন ধরনের উদ্ভট কথা বলছ? আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূলই বরং তোমাদের প্রতি সদয় হয়েছেন এবং অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে তোমাদেরকে ঈমানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। তাছাড়া, তোমরা যদি তোমাদের দাবিতে একনিষ্ঠ হয়ে থাকো তাহলে আল্লাহর রাসূলকে খোঁটা দিও না। কারণ, আসমান ও জমিনের সমস্ত গোপন রহস্য যে আল্লাহর জানা। তিনি তোমাদের অন্তরের খবরও জানেন। তোমরা কতটুকু ঈমান এনেছ তা তিনি ভালো করে অবগত আছেন।
লক্ষ করে দেখুন আল্লাহ এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) কিন্তু আমাদের ঈমান আনার মুখাপেক্ষী নন। বরং আমাদেরকে সৎ পথ প্রদর্শন করার মাধ্যমে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই আমাদেরকে ধন্য করেছেন।
থাক এইসব কথা। মূল কথায় আসি। কালোর ওপর সাদার কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সবাই মানুষ এবং সবাই এক পিতা-মাতার সন্তান। এক মানুষের সঙ্গে আরেক মানুষের বাহ্যিক পার্থক্য আল্লাহ তায়ালার প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্তের কারণে হয়েছে। এর উদ্দেশ্য পরস্পরকে চিনতে পারা; গর্ব বা অহংকার করা নয়। বর্ণ, গোত্র, বংশ ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের মর্যাদা নির্ধারণ করার বিষয়টি ইসলাম নাকচ করে দিয়েছে। ইসলামে মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র মাণদণ্ড হচ্ছে তাকওয়া বা খোদাভীতি।
সুতরাং কালো বলে কেউ খোঁটা দিলে মন খারাপের কিছু নেই।
#সৈয়দ মুকসিত